
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাতের সরাসরি প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজারে। যুদ্ধ শুরুর এক দিনের মাথায় ডিজেলের আন্তর্জাতিক দাম ব্যারেলপ্রতি বেড়েছে ৭ ডলারের বেশি। এর জেরে মালয়েশিয়া থেকে আসা একটি মাত্র জাহাজে ডিজেল আমদানিতে বাংলাদেশ সরকারের বাড়তি খরচ হয়েছে প্রায় ৬৮ কোটি টাকা।
সংঘাতের পরদিনই যাত্রা ডিজেলবাহী জাহাজের
১২ জুন গভীর রাতে ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলার পরদিন, ১৩ জুন ৩৪ হাজার ৬১৭ টন পরিশোধিত ডিজেল বোঝাই একটি জাহাজ মালয়েশিয়া থেকে রওনা দেয় চট্টগ্রামের উদ্দেশে। চট্টগ্রামে পৌঁছায় ১৮ জুন, আর খালাস সম্পন্ন হয় ২২ জুন। জাহাজটি সরবরাহ করেছে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন।
বাংলাদেশে জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহের দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। তারা আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম নির্ধারণ করে সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্ল্যাটস-এর দরের ভিত্তিতে। লোডিং ডেটের আগ-পিছের দুই দিনসহ মোট পাঁচ দিনের গড় ধরে তেলের মূল্য হিসাব করা হয়।
বিপিসির হিসাবে তেলের দামে লাফ
১৩ জুন ডিজেল লোডের দিন থেকে গড় দরে প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম পড়ে ৮৩.৮৪ ডলার। এতে মোট ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৪৯ ব্যারেল ডিজেলের দাম দাঁড়ায় প্রায় ২ কোটি ১৬ লাখ ২৬ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা।
কিন্তু যদি এই জাহাজটি সংঘাত শুরুর আগে আসত, তাহলে খরচ হতো অনেক কম। যুদ্ধের আগে বিপিসির সর্বশেষ ডিজেল আমদানি হয়েছিল ২ জুন, সেই পাঁচ দিনের গড় দরে প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম ছিল ৭৬.৬৯ ডলার। ওই দরে বর্তমান পরিমাণ ডিজেলের আমদানি ব্যয় হতো প্রায় ১৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ সংঘাতের কারণে মাত্র একটি চালানে ৬৮ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হয়েছে।
দ্রুত বেড়েছে আন্তর্জাতিক দর
বিশ্ববাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়,
১১ জুন ডিজেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৭৯.২৪ ডলার,
১২ জুন তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮১.৩৭ ডলারে,
আর ১৩ জুন যুদ্ধ শুরুর দিনেই লাফিয়ে উঠে ৮৫ ডলার।
১৬ ও ১৭ জুন তা পৌঁছে ৮৬.৭৮ এবং ৮৬.৭৯ ডলারে।
১৯ জুন ডিজেলের দাম উঠে ৯৩.৪১ ডলার।
পরবর্তীতে কিছুটা কমে ২৩ জুন দাঁড়ায় ৮৯.৮৮ ডলারে এবং ২৫ জুন এসে হয় ৮২ ডলার/ব্যারেল।প্রভাব পড়ছে জনজীবনেও
দেশে কৃষি, পরিবহন ও শিল্প খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ডিজেল। ফলে ডিজেলের দর বাড়লে বাড়ে উৎপাদন খরচ, পরিবহন ব্যয় এবং পণ্যের দাম, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়।
ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে দাম।
বিশ্ববাজার পর্যবেক্ষণ করে বিপিসি জানিয়েছে, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে ডিজেলের দাম ১০০ ডলার/ব্যারেল ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই আশঙ্কা মাথায় রেখে জ্বালানি আমদানিতে নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।